সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার
১১ নভেম্বর ২০২২
―মেঘশ্রী বন্দোপাধ্যায়
স্কুলের এই চাকরিতে নতুন জয়েন করেছি। কম্পিউটার টিচার। কিছুটা টাইম পাস গোছের, নিজেও জানি ভালো অফার পেলে ছেড়ে দেব। বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোই লাগে। তবে স্কুল যাতায়াতের পথেও সময়টা ভালোই কাটে। প্রথমে অটো, তারপর মেট্রো, শেষে হাঁটা, এই মিনিট পনেরো। ফেরার রুটটা আলাদা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর একটা বাস, আর সেটা থেকে নেমে অটো। ব্যাস্! সমস্ত অ্যাডভেঞ্চারের ইতি। রাস্তায় ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি কখনও বোর হই না। অবশ্য মোবাইলের জমানায় কেউই আজকাল বোর হয় না!
আমি কিন্তু সেই দলে পড়ি না। আমার মোবাইলে খুটুর খুটুর করার দরকার পড়ে না। আমি মানুষ দেখি। দেখি তারা কী করছে, কিভাবে বসছে বা হাঁটছে। কিভাবে কথা বলছে অন্যের সাথে বা ফোনে। আর পড়ে ফেলতে চেষ্টা করি তাদের স্বভাবটাকে। না, এইটা আমার আসল খেলা নয়। তবে খেলার অঙ্গ তো বটেই। খেলাটা শুরু হয় এরপর থেকে। ভারি মজার! আশেপাশের কেউ জানতেও পারে না কখন তারা অজান্তেই আমার সাথে খেলতে শুরু করেছে। আগেই বললাম, মানুষ দেখি আমি। আর তাদের আদল মেলাই পশুপাখির সঙ্গে। আজকাল শুধু রাস্তাঘাটেই নয়, বাড়িতেও খেলি। বারান্দায় দাঁড়ালে কত চলমান লোক দেখতে পাই। সবার মুখের গঠন আলাদা। যাদের মুখে পশুর আদল খুঁজে পাই না, তাদের মগজ থেকে মুছে ফেলি।
সেদিন পিসতুতো দিদি ফোন করল। বলে ‘উফফফ তমা! তুই বলার পর থেকে সেই নিউজ রিডারটাকে এখন যতবার দেখি পুরো ঘোড়ার মতই লাগে! তোর চোখ আছে বটে!’ আমার খুব হাসি পায়। দিদি জানে না ওকেও সজারুর মতো লাগে আমার। কথায় কথায় কাঁটা বেঁধায়। আচ্ছা, যার মুখের আদলে যে পশুর ছাপ, স্বভাবও কী তার মতোই হয়? দিদির স্বভাব আর মুখটা সহজে মেলাতে পারলাম কী ওকে চিনি বলে? কিন্তু যারা অজানা অচেনা, ক্ষণিকের পথসাথী, তাদের স্বভাব কেমন তা কী করে জানব? মাঝে মাঝে মিলে যায়। বেশ একটা আবিষ্কারের আনন্দ পাই তখন। এই তো সেদিন স্কুল যাওয়ার পথে যে মেয়েটা ইয়ারফোনের তার মুখে গুঁজে অনর্গল বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে গেল, তার মুখটা কুমীরের মতো। ঝগড়ার শেষে ফোনে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদল। পরক্ষণেই বান্ধবীকে হাসি হাসি মুখে ফোন করে জানিয়ে দিল এইমাত্র কিভাবে যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে। কুমীরের কান্না! কিন্তু মানুষের চরিত্র বা অভ্যাস তো পাল্টাতেও পারে। আজ যাকে কুমীর মনে হল, কাল তাকে নেকড়ে মনে হতে পারে বা শেয়াল! কিন্তু সে কী হরিণ হয়ে যেতে পারে কখনও? আমার মধ্যেও কী একটা পরিবর্তন আসছে! আগে দিদি কথায় কথায় কাঁটা বেঁধালে আমি কষ্ট পেতাম। চুপ করে থাকতাম। এখন আমিও… কিন্তু আমার মুখে তো কোনো…
ইদানিং মজাটা নেশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অপরিচিত লোকের মুখে চোখ আটকে যায়। যতক্ষণ না মিল খুঁজে পাই মনটা খচখচ করে। অথচ আগে এমনটা হত না। মিল না পেলে সহজেই পাশ কাটিয়ে যেতে পারতাম। এটা কী কোনো অসুখ? গুগলে খুঁজলাম। প্যারেডোলিয়া বলে একটা শব্দ পেলাম। ঠিক অসুখ নয়। এইসব মানুষরা বিভিন্ন প্রাণহীন জিনিসে মানুষ বা পশুপাখির আদল দেখে। এই যেমন মেঘের দিকে তাকিয়ে ডাইনোসোর দেখা, পুরোনো আসবাবের মধ্যে বাউলের মুখ খুঁজে পাওয়া, এইসব! তাহলে কী চাঁদের বুড়ি আর তার চরকার গল্প এই প্যারেডোলিয়ার ফল? ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং, কিন্তু আমার সমস্যাটা একটু আলাদা। আমি প্রাণহীন বস্তুতে নয় উল্টে জ্যান্ত মানুষের মুখে পশুর ছায়া দেখি। শার্ট-প্যান্ট, শাড়ি পরা মানুষের ধড়ে পশুর মাথা, পাখির মুখ। সেই মিশরের দেবতাদের মত। এই ভাবনাটা মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছি না, ধীরে ধীরে আমাকে কেমন গ্রাস করছে।
এই তো আজকেই বি. ওয়ানের প্যারেন্টস-টিচার মিটিঙে এক ভদ্রলোক এল। খুব সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি। হাঁটা অনেকটা পা টিপে টিপে চলার মত, অথচ দ্রুত। চারপাশটা দেখে নিয়ে সামনের চেয়ারে বসল। রিপোর্ট কার্ড হাতে ধরা। সময় নিল। যেন আমাকে মেপে নিচ্ছে দ্রুত! এই সময়টুকু আমিও কাজে লাগালাম। লক্ষ্য করছি লোকটার খুঁটিনাটি। ঝকঝকে চেহারা। কিছুতেই আদলটা মেলাতে পারছি না। খুব অস্বস্তি হচ্ছে। লোকটা যেন চারদিক থেকে জাল বিছিয়ে বিবশ করে দিচ্ছে আমার চিন্তা-ভাবনাগুলো। একটা মৃদু গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। কিসের গন্ধ? পারফিউমের? না মিষ্টি গন্ধ তো নয়! তাহলে কী আমি আদলের সাথে সাথে এবার গন্ধ পেতে শুরু করলাম, আজ এই মুহূর্ত থেকে?
লোকটার ঠোঁট নড়ছে। কিছু একটা বলছে বোধহয়। আমি শুনতে পাচ্ছি না কেন! আমি টিচার। আমাকে তো একটা উত্তর দিতেই হবে। কেমন শীত শীত করছে। ক্রমাগত হাতের তালু দিয়ে দুটো হাতকে ঘষে চলেছি। খড়খড়ে এক অনুভূতি। একটা ঝাঁকুনি দিয়ে জাগালাম নিজেকে। ভদ্র একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে লোকটা কিসব বলছে। আমার বদ্ধমূল বিশ্বাস, এই হাসিটা কৃত্রিম। অন্যসময় লোকটা অন্যভাবে হাসে – হয়তো তখন দাঁত গড়িয়ে রক্ত পড়ে! না না, কিসব ভাবছি আমি! আমাকে শুনতে হবে এর কথাগুলো। বিগলিত কণ্ঠে বলে চলেছে, “রুদ্রর আর সমস্ত সাবজেক্টের রেজাল্ট তো ভালোই হয়েছে, সবেতে এ-প্লাস। শুধু কম্পিউটারে বি-প্লাস।”
রুদ্র কে? আমার মনে পড়ছে না। ক্লাস ওয়ানের সব ছোট ছোট মুখগুলো ভিড় করে আসছে মাথায়। ওদের মধ্যে কোনটা রুদ্র?
“এত কম কেন পেল বলুন তো? কম্পিউটার তো লেখা পরীক্ষা হয় না। খাতাও দেখতে চাইতে পারছি না। আপনি যদি কিছু বলেন…” গলাটা অস্বাভাবিক নরম করে অনুরোধ করছে লোকটা। হ্যাঁ, কিছু তো বলতেই হবে। কিন্তু রুদ্র কোনটা? মনে পড়ছে না! এই তো সব মুখগুলো ভেসে উঠছে, হাসিখুশি দুষ্টুমিমাখা ছোট্ট ছোট্ট মুখ। কোনোটা ছোট্ট পান্ডা, কোনোটা মিষ্টি বেড়াল, ওদের মধ্যে কে রুদ্র? মনে পড়ছে না ঠিক কোন জন। তবু একটা উত্তর তো দিতেই হবে। লোকটা তাকিয়ে আছে। ঢোকা থেকে আমি একটা কথাও বলিনি। লোকটার মুখটা কিসের মত? কোনো মিল পাচ্ছি না কেন? রুদ্রর মুখটাও কী ওর বাবার মত? সেই জন্যই কী মনে করতে পারছি না?
“দেখুন, ক্লাসে যেটুকু সময় ওকে দেখি তাতে বুঝি ওর কম্পিউটারে তেমন ইন্টারেস্ট নেই। মন দেয় না, অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।” গড়গড় করে মিথ্যে বলে গেলাম। ঠিক ইচ্ছাকৃত নয়। ক্লাস ওয়ানের বাচ্চারা হয় ছবি আঁকে নয় গেম খেলার চেষ্টা করে ডেস্কটপ পেলে। পড়াশুনার কচকচি তো সারাদিনই চলে।
এসি ঘরে এই চল্লিশ মিনিট ওদের কাছে মহানন্দ। কেউ কেউ তাও করে না। বন্ধুরা আঁকে, খেলে, ওরা দেখে। আমি বাধা দিই না। আমি টেম্পোরারি। ক’মাসে তোতাকাহিনীর মত পাতা ছিঁড়ে ছোট্ট মগজে গুঁজে কী লাভ! তারচেয়ে এটুকু আনন্দ ওরা পাচ্ছে পাক। অল্প তথ্যের কচকচিও এক ফাঁকে খেলার ছলে বুঝিয়ে দিই। কিন্তু কাউকে কম নাম্বার তো দিই নি। বি-প্লাস কী খারাপ? কেন দিলাম রুদ্রকে বি-প্লাস? অন্য কাউকে দিতে পারতাম। নাকি তাহলে তার বাবাও এভাবে আমার উল্টোদিকে আজ বসে থাকত?
কথাগুলো শুনে লোকটার মুখের কৃত্রিম হাসিটা মিলিয়ে গেল। কঠিন মুখটাকেও কোনো কিছুর সাথে মেলাতে পারলাম না। টেবিলের পেপার-ওয়েটটা নিজের অজান্তে তুলে টেবিলে ঠক ঠক করতে লাগল। ভুরুটা কোঁচকানো। আমি একটু স্বস্তি পেলাম। আমার দিকে তাকিয়ে নেই। মাথা দোলাচ্ছে লোকটা। চুলগুলো কেমন খাড়াখাড়া। কপালে আর চুলের গোড়ায় ঘাম জমে আছে। তাতে আলো পড়ে চকচক করছে। একটা মৃদু গন্ধ, মাথা দুলছে, চকচক করছে… ঠুকঠুক করে ঠুকছে পেপার-ওয়েট, চকচক করছে, গন্ধটা বাড়ছে, মাথাটা দোলাচ্ছে… এক ঝলক বিদ্যুৎ পড়ার মত মাথায় যেন রুদ্রর মুখটা ঝিলিক দিয়ে গেল। সেই ছোট্ট পোকাটা যে ক্লাসের সবচেয়ে দূরের কোণে চুপচাপ সিঁটিয়ে বসে থাকে। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে। নড়েচড়ে না। ঘোলাটে দৃষ্টি। কোনো বন্ধু নেই। অনুভূতিশূন্য মুখ! আর ওই লোকটার মুখে একটা আদল এবার ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে। নাঃ, কোনো পশুর আদল নয়, বরং একটা গাছের আদল! মাংসাশী গাছ। কী যেন নাম? মনে করতে পারছি না। কিন্তু আমি ছবিতে দেখেছি, পড়েছি। এরা গন্ধ ছড়িয়ে, পাতার ডগায় চকচকে শিশিরের মত বিন্দু দিয়ে পোকাদের টেনে আনে। আর তারপর পোকারা ওদের আঠালো ইচ্ছায় আটকে যায়। হাজার চেষ্টা করেও বের হতে পারে না। ছটফট করে আর চুপসে যায়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ধীরে ধীরে। রুদ্র আটকা পড়ে গেছে, বাবার প্রত্যাশার আঠায়।
“আচ্ছা ম্যাডাম! চলি তাহলে। পরের টার্মে রুদ্র কম্পিউটারের দিকে দেখবে। আমি প্রমিস করে গেলাম।” সেই বিগলিত কণ্ঠ আর নকল হাসিটা ফিরিয়ে এনেছে মুখে। লোকটার এবার চলে যাওয়াই ভালো। আমার আর একে দরকার নেই। ওর মুখের রহস্য আমার জানা হয়ে গেছে। কিন্তু স্বস্তি পাচ্ছি কই? উল্টে একটা ভয় গ্রাস করছে আমাকে। এতদিন শুধু পশুর মুখ দেখতাম। আজ এই প্রথমবার কোনো গাছ… আবার তার সঙ্গে ওই গন্ধটা? এটা কিসের ইঙ্গিত? আমি কী ধীরে ধীরে অস্বাভাবিক হয়ে উঠছি? পাগল হয়ে যাচ্ছি? ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। কাঁপুনি দিচ্ছে। এসিটা অফ করা যায় না? ইসসস, রুদ্র, ছোট্ট পোকাটা! আমি মিথ্যে কেন যে বললাম! অন্য কিছু বলতে পারতাম। আমি অজান্তেই ওর ছোট্ট শরীরে কাঁটা ফুটিয়ে ফেলেছি।
উইন্ডো এসির হাওয়াটা হু হু করে গায়ে লাগছে। একটু আগেই শীত করছিল, এখন হঠাৎ গরম লাগছে খুব। কানের পিঠদুটো শুকনো খসখসে। হাতে পিঠে কেমন খড়খড় করছে। রুদ্রর জন্য কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট! স্কুল ছুটির ঘন্টা বাজল। হইহট্টগোলের শব্দ যেন বহুদূর থেকে কানে ভেসে আসছে। বাড়ি ফেরার পথে কারুর দিকে তাকাতে পারলাম না। চোখ তুলতে ভয় করছে। আজ আর কারুর মুখ দেখব না। কোনো আদল খুঁজব না। কখনও কাঁপুনি দিচ্ছে। কখনও গরম লাগছে। হাতের তালু দিয়ে মুখ হাত ঘাড় যা কিছু অনুভব করা যায়, সব কেমন খসখসে! গায়ে মাথায় একটা অসহ্য যন্ত্রণা! রাস্তাটুকু পার হয়ে বাড়িতে ঢুকলে নিশ্চিন্ত!
“এই তমা! কী হয়েছে তোর? শরীর খারাপ?” ব্যাগ রাখতে না রাখতেই মা এগিয়ে এসেছে। আমি চোখটা নিচে নামিয়ে ফেললাম,
“ন্ না তো! দেখো তো গায়ে কিছু বেরিয়েছে?”
“কী বেরোবে? পক্স্টক্স নাকি?” এগিয়ে আসে মা,
“তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন রে? এবাবা জ্বর এসেছে তো রে! যা মা, জামাকাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়। আমি ওষুধ দিচ্ছি।”
“গায়ে কিছু বেরিয়েছে? মুখে? পিঠে?”
“বালাই ষাট! না না। কিচ্ছু বেরোয় নি। ভাইরাল হয়েছে বোধহয়। বাচ্চাদের নিয়ে কাজ তোর!”
কাঁপতে কাঁপতে বিছানা নিলাম। তারপর আর কিছু জানি না। যখন ঘুম ভাঙল আশপাশ নিস্তব্ধ। খুব গরম লাগছে আমার। শুয়ে থাকতে পারছি না। পিঠে হাতে কী সব ফুটছে যেন। পাখা বন্ধ। জানলা বন্ধ। তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ! পাশে মা শুয়ে। শাড়ি দেখেই চিনেছি। মায়ের মুখের দিকে তাকাইনি। ভয় করছে। উঠে বসতে পারছি না। গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা! কোমরে, পায়ে কোনো সার নেই। তালুটা কপালে ঠেকালাম। জ্বর আছে কিনা বুঝতে পারলাম না। কিন্তু কপালে কিসের খোঁচা লাগল। একটা নয়, অনেকগুলো। চোখ টেনে রেখে তালুর দিকে তাকালাম। কিছুই নেই। ভয়টা কেমন শিকড়-বাকড় সমেত জড়িয়ে ধরছে আমাকে। বিছানা থেকে নামতে যেন একটা যুগ কেটে গেল। দেওয়াল ধরে ধরে কোনোমতে বোতলটার দিকে এগোলাম। পারছি না। এইটুকু পৌঁছতেই হাঁপ ধরে গেল। ঢকঢক করে অনেকটা জল গলায় ঢাললাম। নাঃ কোনো আরাম নেই। উল্টে তেষ্টা বেড়ে গেল। শুধু গলাই নয় সারা শরীরটা যেন শুকনো খটখট করছে। আরও জল চাই। এক্ষুনি। মাকে ডাকলাম। নাঃ! শুনতে পায় নি। অঘোরে ঘুমোচ্ছে। আমিই যাই। ঘরটুকু পেরোলেই কিচেন। ফ্রিজে জল। দেওয়াল ধরে ধরে এগোচ্ছি।
জানলা বন্ধ। তাও হালকা একটা আলো ছড়িয়ে আছে ঘরে। আমি এগোচ্ছি, পা দু’টো যেন গেঁথে গেঁথে যাচ্ছে প্রতিবার। ঘরের মাঝামাঝি দেওয়ালের গায়ে দাঁড় করানো মস্ত আয়না। এবার যেতে গেলে আয়না ধরেই এগোতে হবে। কিন্তু আয়নায় যদি…গা শিরশির করছে। চোখটা বন্ধ করে এগোতে থাকি। খসখসে দেওয়ালের বদলে মসৃণ ছোঁওয়া। চোখ খুলে একটিবার আয়নার মুখোমুখি দাঁড়াবার দুর্নিবার ইচ্ছা তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একটা হাড় হিম করা ভয়ে চোখদুটো বন্ধ। আমি আর এক পা’ও এগোতে পারছি না। তেষ্টায় গলা ফেটে যাচ্ছে। গায়ে যেন অজস্র সূচ ফোটাচ্ছে কে! মাথার মধ্যে থেকে আওয়াজ আসছে। হিস হিস শব্দে কে যেন বলছে…
“চোখ খোলো… নইলে এক পা’ও এগোতে দেব না! দেখবে না নিজের মুখ?”
আমি কঁকিয়ে উঠলাম মনে মনে! কোনো শব্দ বেরোল না। আর পারছি না! শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। তেষ্টায় যন্ত্রণায় ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ছি! মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে চোখটা খুললাম…খুব অন্ধকার! আবছা আবছা দেখতে পাচ্ছি, আয়নার ওপারে আমি নেই! কোথাও নেই। বদলে একটা ধূ ধূ মরুভূমি আর… আর সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে অনেকগুলো… আতঙ্কে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম!
আবার সেই হিসহিসে শব্দটা,
“চোখ খোলো? দেখবে না নিজেকে? আদল খুঁজবে না?”
Add Comment