-মিলন মাহমুদ রবি
এ লড়াইয়ে জিততে হবে…
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা নিশ্চয় আপনাদের মনে আছে, ‘রানার ছুটেছে ঝুম ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে, রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে, রাত্রির পথে পথে চলে, কোনো নিষেধ জানে না মানার। দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার…। কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার…। বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের মহামারি আজ সারাবিশ্বে। করোনার ছোবলে প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশ্ব আজ ‘লকডাউন’ নামক নতুন এক শব্দে আটকে আছে।
মানুষ সামাজিক জীব, তাই সে একা থাকতে পারে না। এমন সব পড়াশুনা বইয়ের মধ্যেই যেন লুকিয়ে রয়েছে। আজ মানুষ অসামাজিক হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র এক ভাইরাস থেকে বাঁচতে। সবাই আজ অসামাজিক আচরণে আবদ্ধ হয়ে শারীরিক দূরত্বও বজায় রেখে চলছে। চার দেয়ালের ভিতরে বন্দি থেকে বাঁচার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। গৃহবন্দি মানুষগুলোর এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে অলস সময় পার করতে হচ্ছে। তারপরও থাকতে হচ্ছে পরিবার ও নিজের কথা ভেবে। বেঁচে থাকার আশায়। তামাম দুনিয়ার এমন পরিস্থিতিতে মানুষ আজ আকাশপথটাকেই বেছে নিয়েছে। ইন্টারনেট বর্তমানে এক স্বস্থির ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে চার দেয়ালে থাকা মানুষগুলোর কাছে। কঠিন এ সময়ে টেলিভিশনের সংবাদ এখন খুব গুরুত্ব পাচ্ছে ঘরবন্দি পরিবারের কাছে। সবাই আপডেট সংবাদ পেতে রিমোট হাতে বসে চ্যানেল চেঞ্জ করছে নতুন নতুন তথ্য পেতে।
তেমনি বর্তমান এ লড়াইয়ের সঙ্গী হয়ে দেশের স্বাস্থ্য, প্রশাসন, সেনাবাহিনী, ব্যাংকিংসহ সংবাদের মতো জরুরী সেবার কাজে জড়িতদেরও ছুটি নেই। সংবাদ কর্মীরা ‘রানার’ সেজে যেন ছুটছে সবার আগে। কত দ্রুত আপডেট তথ্য পোঁছানো যায় দর্শকদের মাঝে। এমন ব্যস্ততার মাঝে সংবাদকর্মীদের নিজেদেরই খেয়াল থাকে না ‘পরিবার’ নামে তাদেরও কিছু আছে! প্রতিদিনের খবর সবার আগে ঘরে ঘরে পৌঁছানোর দায়িত্ব থাকে এসব রানারদের।
তাই এ লড়াইয়ের অন্যতম সাহসী সৈনিক সংবাদ উপস্থাপকরাও করোনাকালের হুমকিকে তোয়াক্কা না করে, জীবনবাজি রেখে প্রতিনিয়ত ছুটছেন টেলিভিশন স্টুডিওতে। জাতির এই ক্রান্তিকালে তাঁরা এক হলেন, দায়বদ্ধতা থেকে। নতুন কোন শিরোনামে যুক্ত হতে নয়। শ্রেফ দায়বদ্ধতা থেকে। এমনটাই জানালেন বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা নাদিরা আশরাফ। তাঁর উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় ১৫ জন সহযোদ্ধাকে একত্রিত করে তৈরি করলেন একটি ভিডিওচিত্র।
তিনি বলেন, কঠিন এ সময়ে সবারই এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমিও তার বাইরে নয়। চেয়েছি মানুষের জন্য কিছু করতে। এক ঝাঁক উপস্থাপকের কণ্ঠে সাজানো ভিডিওচিত্রটির মাধ্যমে দর্শকদের অনুরোধ করা হয়েছে ঘরে থাকার জন্য। নাদিরা জানান, ‘আপনার ঘরের জানালা, হাসপাতালের অক্সিজেন ভেন্টিলেটরের চেয়েও উত্তম। আরো বলেন, ‘বিভিন্ন সেবার সঙ্গে জড়িত করোনাযোদ্ধারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও সেই দলের। কোনও ধরনের বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকলেও আমরা নিজেদের সুরক্ষা নিজেরাই নিশ্চিত করে প্রতিদিনই কাজে যোগ দিচ্ছি। সেই দাবি থেকেই বলতে চাই, আমরা আছি আপনার পাশে, দেশের স্বার্থে আপনি ঘরে থাকুন। পরিবার নিয়ে ভালো থাকুন। এ বার্তাটি পৌঁছে দিতেই উদ্যোগটি নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাভিশনের জ্যেষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপিকা সংগীতা খান মুঠো ফোনে বলেন, দুর্যোগ প্রতিরোধে যেখানে সারাবিশ্বের আজ একটাই স্লোগান, ‘ঘরে থাকুন’। সেখানে মানুষ এখনও সচেতন নন। আমরা যারা সংবাদ পাঠ করি, তাদের কিছুটা হলেও মানুষ চেনেন। তাই নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই আহ্বান জানিয়েছি। সবাইকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছি। সাধারণ মানুষকে এই মহামারী সম্পর্কে আরেকটু সচেতন করবার জন্য এমন একটি মহৎ উদ্যোগে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি মানসিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি বোধ করছি। কারণ একজন সংবাদ উপস্থাপকের দায়িত্ব শুধুমাত্র সঠিক তথ্য গুলো জনসাধারণের কাছে তুলে দেওয়াই নয়, বরং দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজের দায়িত্ববোধ থেকে জনগণকে সচেতন করার ব্যাপারেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ১৭ এপ্রিল নাদিরা আমাকে ফোন করে বলে, আপু ভয়াবহ এ পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষ থেকে কিছু করতে চাই। ওর পরিকল্পনা শুনে আমার কাছে সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। তাই নাদিরার সাথে থেকে সহযোগীতা করেছি কাজটা করার জন্য। সবার সাথে আলাপ করে ইন্টারনেটযুগে বাসায় বসে সবার মুঠোফোনে ভিডিবার্তা নিয়ে তৈরি করেছি। কাজটি তেমন মানসম্মত না হলেও সবার কাছে বার্তাটি পৌঁছানো ছিলো মূল লক্ষ। আরো বলেন, কাজটি করতে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সহকর্মীদের সবার মধ্যে ছিলো আন্তরিকতা।
এ বিষয়ে আর একজন সংবাদ পাঠিকা নাজিয়াত শাহরিন জানান, আমার কাছে ফোন আসার পর মনে হয়েছে এ যুদ্ধ যেন আমার, আমাদের, সবার। মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও যেন সচেতনতা ফিরে আসে। না হলে এর ভয়াবহতা কোন পথে যাবে সেটা ভাবতেও পারবো না। তাই এমন একটি কাজের সংঙ্গী হতে পেরে নিজের কাছে ভালোই লেগেছে।
তেমনি রওনক জাহান একজন ব্যাংকার, পাশাপাশি একজন সংবাদ উপস্থাপকও। তার পেশা দুটোই চ্যালেঞ্জিং। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সারাবিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, খুব আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে পরিবার নিয়ে। আমরা এখনই যদি নিজেদের পরিবর্তন না করি, একটু সচেতন না হয়ে চলি তাহলে এর ভয়াবহ রুপ সামাল দেওয়া আসলেই মুশকিল হয়ে যাবে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে ভিডিও বার্তাটি কিছুটা হলেও সচেতনতার পথ দেখাবে।
সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তাটি তৈরিতে আরো যারা অংশ নিয়েছেন সেলিনা তাওহিদ, সংগীতা খান, রওশন কবির, সাদাত সাকের, নাদিরা আশরাফ, আয়শা নুসরাত, বিপাশা মজুমদার, জেবা রহমান, নাজিয়াত শাহরীন, নাহিদ জামান সোমা, সিফাত শারমীন, রওনক জাহান, ফারহানা আহমেদ অরপা, শাকিলা ছোবহান ও ফাতেমা জান্নাত আইরিন ।
(ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন)
কেমন আছেন আপনারা?ঘরবন্দি দিনগুলো কেমন কাটছে?ভাবছেন আর কতদিন ঘরে থাকতে হবে?এটা কি ভেবেছেন?আপনার ঘরের জানালা,হসপিটালের অক্সিজেন ভেন্টিলেটর এর থেকেও উত্তম!!!আপনাকে সংবাদ পৌছে দিতে আমরা বাংলাভিশন সংবাদ টিম সবসময় পাশেই আছি।তাই ঘরে থাকুন।নিরাপদ থাকুন।
Gepostet von Nadira Ashraf am Mittwoch, 22. April 2020
Add Comment