-মজিদ মাহমুদ
আমি আর কবিতা লেখায়
উৎসাহ পাই না
না প্রেম, না প্রতিবাদ অবশিষ্ট আছে
ইংরেজ ও পাকিরা চলে গেছে
আর তো কোনো শালাকে হবে না তাড়াতে
এমনকি রাজাকারের বাচ্চারা ফাঁসিতে ঝুলছে
আর কাকে নিয়ে লিখব কবিতা
আর কেনই বা বলব-
ইনকিলাব জিন্দাবাদ, মেহনতি মানুষ জেগে ওঠো
দেখ শ্বেতাঙ্গ বণিকেরা করছে লুণ্ঠন
তোমাদের শ্রম ও ঘামের অর্থ
দেখ উর্দিপরা উর্দুভাষীরা
বাংলার সোনালি আঁশকে
পরিণত করেছে কৃষকের গলার ফাঁস
মা-বোনের সম্ভ্রম নিয়েছে লুটে
আর কোনো বিদেশি ফিরিঙ্গি উর্দিপরা
বুটের নিচে লুণ্ঠিত হবে না দেশ মাতৃকা
বোনের জীবন চার আনার কাগজ
আর আট আনায় কিনতে হবে না গ্রাম-গঞ্জে
প্রতিটি শিশু আজ স্কুলে যাচ্ছে রাজধানীর
অলিতি-গলিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়
গ্রামে সরকারের বদান্যে মাদ্রাসা
চার লেনের রাস্তা, ফ্লাইওভার রঙ-বেরঙের
বাহারি গাড়ি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টগুলো
টাকায় উপচে পড়ছে মিলিয়ন বিলিয়ন
টাকা আজ বিদেশে বেড়াতে যাচ্ছে
শাদা টাকাদের সাথে ঘর বাঁধছে
তাদের ছেলেপুলেদের আজ
আলাদা করার দরকার হয় না দেখ,
বাঙালি উপনিবেশ গড়েনি,
গড়েছে নিবেশ উন্নয়নের জোয়ারে
ভাসছে দেশ কি আনন্দ! কি আনন্দ!!
মুসল্লিরা মসজিদে নিরাপদে আছে
মন্দিরে বাজছে শঙ্খধ্বনি
মেয়েরা গান ও নৃত্যের বেলেল্লা ছেড়ে
ওড়নাতে মুখ বেঁধে পার্কে মেদ ঝরাচ্ছে
ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের কি সম্পর্ক হবে
তা পবিত্র গ্রন্থে বলে দেয়া আছে
এখন আর কোনো কবি লিখবে না
বিদ্রোহী ভৃগু এখন কোনো কবি
রাবনকে রামের উপরে স্থান দেবে না
এখন রামকে অযোধ্যার মন্দিরে
বন্দি থাকতে হবে রবীন্দ্রনাথকে
নাইটহুড গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে
এখনো যারা কবিতা লিখছেন-
তারা বাজারের ফর্দ লিখছেন,
পুলিশের বিধিমালা লিখছেন
শেয়ালের হুক্কাহুয়া লিখছেন,
জঙ্গিদের ইশতেহার লিখছেন
ইন্দো-মার্কিন ভিসা খুঁজছেন,
মক্কায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন
আর যারা অর্থের আড়ালে অন্ধকার কক্ষে
কবিতায় রয়েছেন জারি তৈয়ার করছেন
নশ্বর দেহের অবিনশ্বর মমি!
তারা কালোত্তীর্ণ কবি,
সমকালে মূল্য পাননি বলে
তরুণ অধ্যাপকগণ মহাকালে তাদের নিয়ে
করবে গবেষণা তাদের মমিগুলো দেখে বলবে,
এখনো রক্তমাংসহীন কি শক্ত
তাদের বুদ্ধির তারিফ করে রচিত হবে
অভিসন্দর্ভ আর আমার মতো
যারা লেখা দিয়েছেন ছেড়ে
তারা কাটাপড়া মানুষ- তাদের জিভ নেই,
তর্জনি ও মধ্যমা নেই
মিলিত হওয়ার লিঙ্গ নেই
বালি ও সুরকির মতো পুরনো দালান
থেকে তারা প্রতিদিন খসে পড়ছে।
Add Comment