হ্যালোডেস্ক
শরতের অন্যতম আকর্ষণ কাশবন। কাশফুল। কাশ তৃণ বা ঘাস জাতীয় ফুলগাছ। কাশগাছ ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। শরত্কালে কাশগাছে সাদা ও রুপালি রঙের ফুল ফোটে। কাশফুল পালকের মতো নরম।
শুভ্রতার ছোঁয়া নিয়ে শরতের আগমন ঘটে প্রকৃতিতে। গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষার আগাম বার্তা ছাড়া বৃষ্টির পরেই হঠাৎ প্রকৃতিতে দেখা দেয় স্বচ্ছ নীল আকাশ। যাতে খেলা করে সাদা সাদা মেঘ। সারা দিন পুরো আকাশজুড়ে চলে মেঘের ভেসে বেড়ানো। শরতের আরও এত অনুষঙ্গ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব। কান পাতলে শোনা যায় ঢাকের গুড়গুড় বাদ্যি। শরতের রাতের আকাশেও দেখা মেলে হাজার তারার মেলা। নীল আকাশের বুক চিড়ে দেখা দেয় শুভ্র চাঁদ আর তার আলো ঠিকরে পড়ে গাছের পাতায় পাতায়। শরতের এই ঋতুচক্রে আসা রূপ লাবণ্য শরতকে করেছে ঋতুরানী। এছাড়াও শরতকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। শরতের স্বচ্ছ আকাশ, সাদা মেঘের আনাগোনা আর শিউলি ফুলের কারণের একে এমন নামে নামকরণ।
শরতের অন্যতম আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে শরতের কাশফুল। কাশফুল ছাড়া যেন শরতের এই আগমন অসম্পূর্ণ। নদীর পাড় ঘেঁষে দেখা মিলে এই কাশফুলের। সবুজ চিরলপাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখা দেয় কাশফুল। নরম পালকের ন্যায় ধবধবে সাদা কাশফুল পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসের দোলায় নুইয়ে পড়ে। কখনও দূর থেকে দূরে বাতাসে ভর করে উড়ে বেড়ায় এসব কাশফুল। তবে রুক্ষ, চরাঞ্চল এলাকাতে অথবা পাহাড়ের ঢালে দেখা যায় এসব কাশফুল। অন্যদিকে নদীর কাছেই কাশফুলের বেড়ে উঠার জন্য সবচেয়ে উপযোগী স্থান। এসব নদীর পাড়ে জমে থাকা পলিমাটিতে খুব সহজে বেড়ে উঠে কাশফুলের গাছ। কাশফুলের আছে আরও একটি প্রজাতি। এ প্রজাতিটিকে বলা হয় কুশ। এরা দেখতে কাশফুলের মতই। কাশফুলের এই আলাদা বৈচিত্র্যতার জন্য শরতের নীল আকাশে শুভ্র কাশ ফুলের ছোঁয়া প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে কাশফুলকে করে তুলেছে অন্যন্য। তবে এ কাশফুলের আছে আরও অনেকগুণ।
শুভ্রতার ছোঁয়া মাখা এই কাশফুল পিত্তথলিতে পাথর দূর করতে যেমন সহায়তা করে তেমনি এর গাছের মূল দিয়েও তৈরি করা হয় নানা রোগের ওষুধ। অনেকেই আবার রূপচর্চার ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন কাশফুল। চন্দনের মতো কাশফুলের বাটা গায়ে মাখলে তা সুগন্ধির মতো কাজ করে। ঋতু চক্রে আসা শরতের পুরো সময়জুড়েই দেখা মিলে কাশফুলের। শুভ্রতার ছোঁয়ায় প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে নিজ আঙ্গিকে। তাই তো যুগ যুগ ধরে কবিতায় কিংবা নারী নিজেকে শরতের শুভ্রতায় আর স্বচ্ছ নীল আকাশের মতো সাজিয়ে তুলতে চেয়েছে প্রিয় মানুষের কাছে। আর যুগে যুগে প্রকৃতিও নিজেকে সাজিয়ে তুলেছে শরতের শুভ্রতায়।
জ্যোৎস্নার মাঝে। প্রিয়জনের হাত ধরে অনুভব করি স্নিগ্ধতা। শরতের স্তব্ধতা যেন দূর গ্রামের দিগন্তরেখার নিচে ঘনায়মান সন্ধ্যার মতোই শান্ত ও মধুর। এমন মধুর একটি ঋতু শুধু ভাবনায় নয়, বাস্তবেও নির্মাণ করা সম্ভব। যদিও পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে শরতের অপরূপ সেই রূপ-মাধুর্য এখন আর আগের মতো নেই। তবুও ঋতুচক্রে শরৎ আসে। আর এই ঋতুচক্রের বর্ণিল দোলায় উদ্ভাসিত হোক স্নিগ্ধ শরতের শুভ্র কাশফুল। শরতে জেগে উঠেছে গোটা প্রকৃতি। এই প্রকৃতিকে বর্ণিল করে তুলতে ফুটেছে শরতের কাশ ফুল।
ছবি: ইমরুল হক ইমন, গোপালগঞ্জ
Add Comment