হ্যালোডেস্ক:
একটা স্বপ্নের নীড়। একটা নিজের বাড়ি করার শখ সবারই আছে। বাড়িটা যেন শুধু মাত্র মাথা গোজার স্থান না হয়, হয় যেন একটা সৃজনশীল শিল্প কর্ম। বলছি দিন শেষে সাজানো আপন নীড়ের কথা।
দিন দিন ইন্টেরিয়র ডিজাইন দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় ইন্টেরিয়রের কাজ করে সফলতার মুখ দেখছেন অনেকেই। বর্তমান সময়ে অনেক উদ্যমী তরুণ নিজেদের দক্ষতা ও সামর্থ্য দিয়ে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সঙ্গে সখ্য গড়ে নিজেকে সফল করে তুলছেন, তেমনই একজন নারী দিল আফরোজ সাইদা।
ইতিমধ্যে সাইদা নিজেকে তৈরি করেছেন এসেসর, সেফ, কালিনারি আর্টিস্ট ও ফুড কলামিস্ট হিসেবে। ক্রিয়েটিভ কাজ ছোটবেলা থেকেই পছন্দ তাঁর। তাই হোম ইকোনোমিক্সের আর্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে মাস্টার্সও করেছেন, এছাড়া কালিনারি আর্ট নিয়ে ডিপ্লোমা করেছেন NHTTI থেকে। দেশে ও দেশের বাহির থেকে ক্রিয়েটিভ কাজের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। এর মধ্যে- কেক ডেকোরেশন, ডেজার্ট, ড্রেস মেকিং ও ডিজাইন, ব্লক, বাটিক হেন্ড পেইন্ট ইত্যাদি। বাসার অধিকাংশ কাজ নিজ ডিজাইনে করতে পছন্দ তাঁর।
তবে সাইদা অনেকটা শখের বশে শুরু করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ। ছোট বেলা থেকেই সাইদা ঘর সাজানো গোছানোতে বেশ এক্সপার্ট। এটাকে নেশা বললে ভুল হবে না। তবে ইন্টেরিয়র ডিজাইনে তার নেই কোন প্রশিক্ষণ। সৃজনশীল কাজের প্রতি আগ্রহ তাঁর বরাবরই। সেই আগ্রহ থেকে নিজের ঘরও নিজ হাতে সাজিয়েছেন দুই সন্তানের এই জননী। একবার তাঁর সাজানো ঘরে ঢুকলে চোখ জুড়িয়ে যাবে সবার!
তিনি বলেন, অনেকেরই ধারণা বাসা বাড়িতে ইন্টেরিয়রের কাজ করতে গেলে অনেক টাকার ব্যাপার। সৌখিনতা সবার জন্য না। এমন ধারণা ভুল। তার মতে ব্যবহৃত অনেক আসবাপত্র, পুরনো পর্দা, কাপড়সহ বিভিন্ন আসবাপত্রকে একটু মাথা খাটিয়ে কাজ করলে ঘরকে করা যায় দৃষ্টিনন্দন। এমন সত্যতার প্রমান মেলে তার বাসায় যেয়ে। এ ঘর ও ঘর ঘুরে দেখা যায় তেমনটা। আসলেই সৌন্দর্যই নারীর শোভা। তবে তার মতে কালার সেন্সটা খুবই জরুরী। ঘর সাজানোর কাজে কালার ম্যাচিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শাড়িও তিনি নিজ ডিজাইনে পড়েন। প্রতিটা শাড়ির কালার কম্বিনেশন দেখার মতো। তার কথায়, একটু মাথা খাটালে যে কেউ এমন ডিজাইন করে নিজেও বাসায় বসে করতে পারেন। সাইদা তার শখ পূরণের ক্ষেত্রে সব সময় নিজেকে একটু ব্যস্ত রাখেন ভিন্ন ভাবে। কারণ জানতে চাইলে বলেন, যখন যেখানে যাই সেটা হতে পারে শপিংয়ে অথবা কোথায়ও ঘুরতে চোখ থাকে ইউনিক কি আছে সেখানে! কোনটা কেনা যায়। একটু স্পেশাল কি পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত তার করা ইন্টেরিয়র ডিজাইন বাহবা কুঁড়িয়েছে বেশ। তাঁর মতে ডিজাইন সৌন্দর্য বর্ধনে অন্যতম ভূমিকা রাখছে সব সময়।
ড্রইং রুম সাজাতে বাজার থেকে কাপড় কিনে বাসায় দর্জি এনে ডিজাইন দেখিয়ে দিয়ে করেছেন আকর্ষণীয়। আবার পুরনো পর্দা কেটে কালার ম্যাচিং করে করেছেন পর্দার পেলমেট। এছাড়া পুরনো ফার্নিচারও কাঠ মিস্ত্রী এনে ডিজাইন দেখিয়ে দিয়ে নিজের মতো ডিজাইন করে সাজিয়েছেন মনের মতো। যা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই।
ডাইনিং রুম একটু ভিন্ন ভাবে সাজানো। টেবিলে প্লেট, গ্লাস, চামিচ, পানি সবসময় থাকছে রেডি। দেখে বোঝার কোন উপায় নেই, মনে হবে কোন রেষ্টুরেন্ট। বাসায় গেষ্ট আসলে নতুন করে রেডি করার প্রয়োজন হবে না। গেষ্টদের বসিয়ে রেখে গ্লাস, প্লেট টানাটানির বাড়তি সময় নষ্ট করতে চান না তিনি।
বাচ্চাদের পড়ার ঘরে কোন খাট রাখেন নি। সেখানে বাচ্চারা শুধু পড়বে আর খেলা করবে। রুমটি সাজানো হয়েছে বেশ আকর্ষণীয় যেন চেখে পড়ার মতো। বাচ্চাদের ঘুমানোর ঘর আলাদা। তিনি বলেন, পড়ার রুমে খাট দিলে বাচ্চারা পড়তে বসলে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করে ফেলবে তাই এমন চিন্তা থেকেই ডিজাইন করা। নজর কারার মতো বেড রুম। সব কিছুই আলাদা ডিজাইনে সাজানো। কেনটার সাথে কোনটার মিল নেই। সব কিছুতেই ভিন্নতার ছোঁয়া।
কিচেন ঘুরে মনে হলো রেডি করা একটি রেষ্টুরেন্টের কিচেন। কিছু অর্ডার দেওয়া মাত্রই গরম গরম খাবার রেডি।
হালসময়ে নিজেকে একজন শেফ ও কালিনারি আটির্ষ্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। পাশাপাশি একজন ডিজাইনার হিসেবে বেশ এগিয়ে নিয়েছেন সামনের দিকে। তাঁর দৃষ্টিনন্দন এমন কাজ তাকে বেশ আনন্দ দেয়। সাইদা বলেন, অন্দরের প্রতিটি স্থানকে সঠিক ও সফলভাবে ব্যবহার উপযোগী করে আসবাব, গৃহসজ্জা, লাইট ইত্যাদির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের ঘর অথবা অফিস নান্দনিকভাবে ডিজাইনে উপস্থাপন চাইলে আপনিও করতে পারেন।
Add Comment