হ্যালোডেস্ক
স্নিগ্ধার নতুন বিয়ে হয়েছে। তাই করোনা সময়েও ওর মন খুব ফুরফুরে। একে তো পছন্দের মানুষটিকে জীবনসঙ্গীকে পেয়েছে। তারওপর দেশে করোনা আসার আগেই বিয়েটা হয়ে গেছে। তো, মৌমিতার মতো যাদের নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের বলছি, হানিমুন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরই কিন্তু শুরু হবে নতুন বাস্তবতা। অর্থাৎ আপনি এখন একটি নতুন পরিবারের সদস্য হয়েছেন আপনাকে তাই খানিকটা বুঝেশুনে চলতে হবে। আর নতুন অবস্থাতেই যদি এতে গড়বড় হয় তাহলে সারাজীবন ধরে আপনাকে পস্তাতে হবে। আর এমন ক্ষেত্রে পছন্দের মানুষটিরও কিন্তু বিগড়ে যেতে বেশিদিন সময় লাগে না। তাই নতুন বিবাহিত নারীদের জন্য আমাদের এই ১০ টিপস।
১) স্বামীর পরিবারকে নিজের করে নিন
আপনাকে আগে এটা বুঝতে হবে যে এটা আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষের পরিবার। তার পরিবার মানেই সেটি আপনারও পরিবার। তাই নিজের সংসার সাজিয়ে নিন নিজের মতো করে। তাই বলে কাউকে বাদ দিয়ে বা অবহেলা করে নয়, সবাইকে নিয়েই সাজাতে হবে নতুন সংসার।
মনে রাখা দরকার, শ্বশুরবাড়ি কখনই আপনার প্রতিপক্ষ নয়। তাদেরকে নিজের পরিবারের একটা নতুন সংযোজন বলে ভাবুন, দেখবেন যে তা তখন এত অপরিচিত মনে হবে না। আপনার স্বামী এই পরিবারেই বড় হয়েছেন এবং পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে এই পরিবারকে তিনি বেশি ভালবাসেন। আর তার ভালবাসার মানুষরা তো আপনারও ভালবাসার মানুষ।
২) ইগো বাদ দিন
যে কোনও ধরনের ইগো বর্জন করুন। সম্পর্কে তিক্ততা আসার পেছনে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখে আমাদের ইগো। সবসময় বিনীত থাকুন, ইগোকে দূরে সরিয়ে রাখুন। যেকোনো খালি স্পেস ভালবাসা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব, সময় লাগতে পারে, কিন্তু অসম্ভব নয়। নতুন সংসার সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে হলে আপনার ইগো বাদ দিতে হবে।
৩) তুলনা করবেন না
ভুলেও কখনো শ্বশুরবাড়ি আর বাবার বাড়ির তুলনা করতে যাবেন না। দুটো পরিবার দুটো ভিন্ন পরিবেশ, এর মধ্যে কখনো তুলনা হয় না। তুলনা করতে গেলে হয়ত এমনও হতে পারে, যে জিনিস আপনি বাবার বাড়িতে পান নি সেটা হয়তো শ্বশুরবাড়িতে এসে পাচ্ছেন। তখন কি বলবেন, যে আগে বাবার বাড়ি ভালো ছিল না? নিশ্চয়ই না? প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব কিছু নিয়ম কানুন আছে, ধারা আছে। এগুলোকে সম্মান করুন। এর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়তো একটু সময় লাগবে, কিন্তু ‘পারবেন না’ বা ‘করব না’এমন মনোভাব কিন্তু অশান্তি বাড়বে।
৪) পরিবারটিকে জানার চেষ্টা করুন
নতুন পরিবারকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনার স্বামী হতে পারেন আপনার সবচেয়ে বড় সহযোগী। তার কাছ থেকে পরিবারের সকলের সম্পর্কে জানুন। আত্মীয়-স্বজনদের চিনুন। তাদের সাথে নিজে থেকে গিয়ে আলাপ করুন। অনেক সময় বাড়ির নতুন বউকে নিয়ে একটু আধটু মজা করা হয়, সেটাকে প্রথমেই নেগেটিভ নেবেন না কিংবা মন খারাপ করবেন না। বিয়ের পরে বাড়িতে একটা উৎসবের পরিবেশ থাকে। তখন এ ধরনের হাসি ঠাট্টা চলতেই থাকে। কোনও বিষয়ে অস্বস্তিবোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। তবে কোনও কিছু বেশি খারাপ লাগলে আস্তে ধীরে স্বামীকে জানাতে পারেন।
৫) বাচ্চাদের প্রাধান্য দিন
বাড়ির বাচ্চাদের সাথে মিশুন সবার আগে। বড়দের চাইতে বাচ্চাদের সাথে বন্ধুত্ব করা অনেক বেশি সহজ। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তাদের গল্প বলুন, তাদের পছন্দের খাবার তৈরি করে দিন, বা ছবি আঁকায় সাহায্য করুন। অথবা তাদের পড়াশনার ব্যাপারে সাহায্য করুন। এতে করে বাচ্চাদের সাথে আপনার একটা সহজ সম্পর্ক তৈরি হবে, পাশাপাশি বাড়ির বড়রাও আপনার ব্যাপারে ভালো একটা মনোভাব পোষণ করবেন।
৬) বড়দের সম্মান করুন
বাড়ির বড়দের সম্মান করুন। কথা বলার সময়, খাওয়ার সময় বা যদি আপনি চুপচাপ বসে থাকেন তখনও। বাড়ির বড়দের সামনে মোবাইল ফোন চাপাচাপি করা একেবারে নিষেধ। এটা খুবই বেয়াদবি। খাবার টেবিলে বসলে অন্যদের সাথে পারিবারিক আলোচনা শুনুন, তবে শুরুতেই নিজের মতামত দিতে যাবেন না। পুরো বিষয়টা আগে বুঝুন, তারপরেই মতামত দেবেন। অবসরে শাশুড়ি বা শ্বশুরের সাথে তাদের পুরনো দিনের গল্প শুনুন, যদি মনে করেন সেটাতে তারা আনন্দ পাচ্ছেন, তাহলে সে ব্যাপারে আপনিও উৎসাহ দেখান। শ্বাশুড়িকে মায়ের স্থানে বসান। বউ-শ্বাশুড়ি সম্পর্ক করে তুলুন মধুর।
৭) পরিবারের কাজে সাহায্য করুন
নতুন বাড়িতে এসেই কেউ আপনাকে পুরো বাড়ির রান্নার দায়িত্ব দেবে না। তাই আপনারই উচিত হবে ছোট ছোট বিষয়ে তাদের সাহায্য করা। রান্নার ব্যাপারেই হোক বা ঘর গোছানোর ক্ষেত্রেই হোক, নিজে থেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
তবে একটু সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো কাজের আগে সেটা শাশুড়ি বা ননদকে জিজ্ঞেস করে নিন, যে কাজটা তারা কিভাবে করেন? এটাতে ছোট হওয়ার কিছু নেই। প্রতিটি বাড়িতেই সব কাজের কিছু আলাদা নিয়ম কানুন থাকে। সেগুলো জেনে নিন, দেখবেন আর কোন সমস্যাই হচ্ছে না।
৮) নিয়মিত যোগাযোগ রাখা
নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যদি আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি বা দেবর-ননদ আপনাদের সাথে না থাকেন, তাহলে প্রতিদিন একবার আপনার শ্বশুর-শাশুড়িকে ফোন করুন, তাদের দিন কেমন কেটেছে জিজ্ঞেস করুন। আপনি সারাদিন কী কী করলেন সেগুলো তাদের বলুন। এতে করে সম্পর্ক অল্পদিনেই সহজ হয়ে যাবে। এছাড়া অন্য সদস্য যেমন দেবর-ননদ তাদের সাথে সপ্তাহে অন্তত দু-তিন বার যোগাযোগ করুন। এতে সম্পর্ক ভালো থাকবে। মজবুত হবে। ননদ-ভাবী সম্পর্ক যেন হয় বোনেদের মত।
মাঝে মধ্যে সময় করে তাদের বাসায় বেড়াতে যান এবং তাদেরও আসতে বলনি। আসলে যাতায়াত না থাকলে তো কোনও সম্পর্কই টিকে না।
৯) সঙ্গীর প্রশংসা করুন
কারণে অকারণে সঙ্গীর প্রশংসা করুন। ভালো দিক, বিরক্তিকর দিক সবারই আছে। আপনার সঙ্গীর পরিবারের সদস্যরা কিন্তু আগে থেকেই এসব জানেন। তাদের কাছে নতুন করে এগুলো নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করা বা অভিযোগ করা ঠিক হবে না। তাদের সামনে বরং আপনার সঙ্গীর প্রশংসা করুন। এতে তারাও খুশি হবেন। আপনার দাম্পত্য সম্পর্ক হবে আরও মধুর।
১০) সরাসরি কথা বলুন
পরিবারের কোনও সদস্যের সাথে কোনও কিছু নিয়ে সমস্যা হলে সেটা আগে ভালভাবে বুঝুন, আদৌ সেটা সিরিয়াস কিনা। যদি মনে করেন সিরিয়াস তাহলে সরাসরি কথা বলুন, তবে সেটা যেন হয় বিনয়ের সাথে, শাশুড়ির সাথে সমস্যা হল, সঙ্গে সঙ্গে মাকে ফোন করে ডেকে এনে তাকে দিয়ে বলানোর চেয়ে আগে নিজে চেষ্টা করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের চেষ্টাতেই সবচেয়ে ভালো সমাধান আসে। এগুল-ই সুখী দাম্পত্য জীবনের সহজ রহস্য।
বিয়ের পরে নতুন মানুষ, নতুন সংসার একটু আধটু সমস্যা তো থাকবেই। সেগুলো নেতিবাচকভাবে না দেখে তাদের বোঝার চেষ্টা করুন। এই সময়টা আনন্দের, একে অপরকে ভালবাসার। এই সময় আর কখন আবার ফিরে আসবে না। তাই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট না করে বুদ্ধিমত্তার সাথে এগুলো মোকাবিলা করুন। দেখবেন, আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেছে। আর বছর পেরুনোর আগেই আপনি কখন যেন এই পরিবারের একজন হয়ে উঠেছেন। তারাও আপনাকে ভালোবাসছে এবং পছন্দ করছে। আর সবাই মিলেমিশে হাসিখুশি থাকার নামই তো জীবন। একা একা থাকায় কোনও সুখ নেই। তাই নিজে ভালো থাকুন এবং আশপাশের সবাইকে ভালো রাখুন।
Add Comment