পর্ব:০৭
-ইকবাল রাশেদীন
মিং এবং শিঙ রাজবংশের রাজকীয় প্রাসাদ এই নিষিদ্ধ নগরী। বহুলভাবে এটিকে ফরবিডেন সিটি বলা হয়। ১৪০০ সালের দিকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৪২০ সালে। দুই রাজবংশ মিলিয়ে প্রায় ২৪ জন সম্রাট এখানে বসে গোটা চীন শাসন করেছে। বহুবছর এই প্রাসাদে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। ১৯২৫ সালে জনগণের দেখবার জন্য নগরীটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
কয়েকবার লুটপাটের পর এখানে এখন আর দালানকোঠা ছাড়া মূল্যবান তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। সম্রাট কাইশেক তার দলবল সহ তাইওয়ানে পালিয়ে যাবার সময় শেষবার এখানকার মূল্যবান সামগ্রীসমূহ সাথে করে নিয়ে যায়। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ বেইজিং এর বদলে তাইওয়ান সরকারকেই গণচীনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে মনে করতো। তাইওয়ান এবং কাইশেকের সৈন্যরাও মনে করতো একদিন মাও সে তুং এর কাছ থেকে তারা মূল চীনকে ছিনিয়ে নেবে।
যা হোক, এই নিষিদ্ধ নগরী নিয়ে অনেক কৌতুহল ছিল আমার। এর ইতিহাস নিয়ে বিখ্যাত সিনেমা ‘দ্য লাস্ট এম্পেরর’ দেখবার পর এটি দেখবার জন্য আমার আগ্রহ বেশি তৈরি হয়।
বেইজিং শহরের কেন্দ্রস্থলেই এই রাজ প্রাসাদ অবস্থিত। সরাসরি এর ধারেকাছে গাড়ি নিয়ে পৌঁছানো যাবে না। অনেক নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে অনেকদূরে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে এর গেটে পৌঁছাতে হবে। পথে সিকিউরিটি চেক হবে কমপক্ষে দু’বার। তবু নিষিদ্ধ নগরী বলে কথা! নির্মাণ বৈচিত্র্য ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য প্রাসাদের ভোগবিলাসের সুবিধার সাথে এর তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ভিতরেই রয়েছে সবরকম সুযোগসুবিধা এমনকি রাজারাণীর বাজার করবার জন্য ছোটো মার্কেট পর্যন্ত। বলা হয় তাজমহলের চেয়েও প্রতিবছর এখানে দর্শক বেশি হয়। সিকিউরিটি চেকের সময় লম্বা লাইন হয় ১ কিলোমিটার পর্যন্ত। আমার ভাঙ্গা পায়ে দুটি ক্রাচ সহ এভাবে লাইন দেয়া অসম্ভব প্রায়। সাথে করে খাবারদাবার বহন করাও যাবে না।
অনেক কষ্ট হলো, তবু দেখে গেলাম। মনের মধ্যে এই সাহস রেখেছিলাম যে, সম্রাট বাবরের মাতৃকুলের পূর্বপুরুষ ছিল চেঙ্গিস খান। সেই চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য দেখতে এসেছি। আর বাবরের পিতৃকুলের পূর্বপুরুষ ছিল তৈমুর লং। এই তৈমুর লং প্রায় অর্ধেক পৃথিবী জয় করেছিল – তারও এক পা ছিল খোঁড়া! ইচ্ছা এবং সাহস হচ্ছে আপনার বড় সম্পদ।
ছবি: লেখক
Add Comment