হ্যালোডেস্ক
বাঙালির লাল-সবুজের সঙ্গে সখ্য রক্তে মিশে আছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর চেতনাকে বুকে ধারণ করে তাই তো বিজয় উৎসবকে রাঙিয়ে তুলতে চায় ভিন্ন আমেজে। জাতীয় এ উৎসব ঘিরে ফ্যাশনসচেতন তরুণ-তরুণীদের ট্রেন্ড ফ্যাশনেও আনে নানা পরিবর্তন। জাতীয় পতাকার প্রিয় লাল-সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকাদিতে সেজে ওঠে দিনটি। তাই এ দিনটিতে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো পোশাক ডিজাইনে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসসহ নানা বিষয় পোশাকে তুলে ধরে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে আসছে। ডিজাইনাররা বিশেষ দিন ও উৎসবগুলোকে সর্বদাই রাঙিয়ে তোলেন সময়োপযোগী পোশাকের মাধ্যমে। বিজয় দিবস, এ দিনটি কষ্টের, আনন্দের এবং অর্জনের। এ দিনটিকে উদ্যাপন করি শহীদদের স্মরণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়ে।
লাল-সবুজের মাস এই ডিসেম্বর। সবুজের মধ্যে লাল, এ যেন বিজয়ের প্রতীক। অন্য আর এগারোটা মাসের চেয়ে এই মাসটা একটু বেশিই রঙিন। কেননা এ মাসেই বাঙালির প্রাণের বিজয় উদ্ভাসিত হয়েছিল পৃথিবীর বুকে। পতাকার লাল-সবুজে পরিচিতি পেয়েছিল বিশ্বদরবারে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু মনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বাঙালি তরুণ-তরুণীরা সেজে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আর সেই বিজয়ের চেতনা এখন শুধু প্রয়োজনীয় পোশাক-পরিচ্ছদ কেনাকাটার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ফ্যাশনসচেতন হিসেবে নিজেদের মূল্যবোধকে শানিয়ে তুলেছে বহুগুণে। উৎসব-পার্বণ ছাড়াও বিজয় দিবসে ফ্যাশনগুলো আকর্ষণ করে সব বয়সী ক্রেতাকে। নারী-পুরুষ ছাড়া শিশু-কিশোরও মেতে থাকে বিজয়ের আনন্দে। দিবসটি উদযাপন করতে গিয়ে চারদিকে কেবল লাল-সবুজের অপূর্ব সমন্বয়, যা বরাবরই চোখে পড়ার মতো।
বিজয়ের মাসে পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোয় থাকে বিশেষ আয়োজন। যদিও শীত বলে ডিজাইনারদের নজর থাকে গরম কাপড়ের ওপর। কিন্তু তাই বলে তো বিজয় বাদ দিয়ে নয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনটাই দেখা মিলছে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস আর শপিংমলগুলোয়। লাল-সবুজের আঁচড়ে সাজানো পোশাকগুলো যেন একেকটি বিজয় উৎসবের পতাকা।
তাইতো পোশাকে মূল রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে সাদা, লাল, পতাকার সবুজ ও টিয়া। পোশাক অলঙ্করণে সহযোগী রং হিসেবে আছে সবুজের বিভিন্ন শেড, সাদা, টিয়া, গোল্ডেন হলুদ। এর মধ্যে রয়েছে স্ট্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ ইত্যাদি। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, ওড়না, ব্লাউজ পিসের পাশাপাশি থাকছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট ও শিশুদের পোশাক। জুনিয়রদের পোশাকেও রয়েছে বিজয় উৎসবের আমেজ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পোশাকে তুলে ধরার নানা আয়োজন করেছে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলো।
পোশাকে মূলত ১৯৭১ সালের বিজয়ের প্রাধান্য থাকছে।’ ছেলেদের বিজয়ের ফ্যাশনে প্রতিবছরই থাকে বৈচিত্র্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লাল-সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে বিজয়োল্লাসের প্রকাশ থাকছে পোশাকে। বিজয় দিবসের আয়োজন শুধু বড়দের জন্যই নয়, ছোটদের জন্য ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করেছে বিজয় উৎসবের পোশাক। লাল, সবুজ আর টিয়া রঙে তৈরি করা হয়েছে ছোট মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, টপস ও ফতুয়া। আর ছোট ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্টও সাজানো হয়েছে বিজয়ের রঙে। বাচ্চাদের পাঞ্জাবির কাটিংয়ে আনা হয়েছে নানা পরিবর্তন। আজ থেকে কিছু বছর আগে (এক দশক) তাকালেও দেখবেন বিজয় দিবস নিয়ে এত আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। এখন মানুষ শৌখিন। তাই তো পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্যাশন হাউসগুলোও রুচিশীল ও উৎসবনির্ভর পোশাক তৈরি করেছে। ভিন্ন ফ্যাশনে মজতে অনেকেই নিজের সৃজনশীলতায় রাঙিয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন একদম আলাদা একটি বিজয় দিবস স্টাইল।
এই দিনে আমরা যদি আমাদের কাজে ‘৭১-এর চেতনা ফুটিয়ে তুলতে পারি তা হলে তা মানুষের মধ্যেও অন্যরকম একটি প্রভাব ফেলবে। পোশাকের মাধ্যমেও মানুষের চেতনায় প্রভাব ফেলা সম্ভব। তাই শুধু ব্যবসায়িক চিন্তাই নয়, এখানে একটা চেতনা কাজ করেছে। লাল ও সবুজে ফুটেছে বিজয়ের নকশা। সবুজ আর লালের নানা শেডও এ ক্ষেত্রে পরিপূরক হয়েছে। তাই তো শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি কিংবা উপহার সামগ্রীগুলো মুক্তিযুদ্ধ ছাপিয়ে তৈরি করা হয়েছে। অনেকে আবার লাল-সবুজের পাশাপাশি সাদা, কালো, হলুদ, নীল, কমলা ইত্যাদি রঙের সংমিশ্রণেও পোশাকে নিয়ে আসছেন বিজয় উৎসবের আমেজ। মোটিফের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে প্রাচুর্য। বিজয়ের পোশাকে উঠে আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, কবিতা, স্লোগান, মিছিল, স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি, গৌরবোজ্জ্বল বিভিন্ন মুহূর্ত, দেশাত্মবোধক গানের লাইন ও বর্ণমালা। এ ছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা, জাতীয় বীরদের পরিচয়-সংবলিত পোশাক বা শিল্পীর নকশা করা শাড়ি বিজয় দিবসের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য তুলে ধরে। বেছে নিতে পারেন এগুলোও। আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন প্রজন্মকে পোশাকের দিক থেকে করেছে স্বদেশমুখী। তাদের ডিজাইনের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে দেশাত্মবোধের চেতনা।
পোশাকে বিজয়কে ফুটিয়ে তোলার জন্য জাতীয় জীবনে কিছু দিন আছে, যেগুলো খুবই অর্থবহ এবং সবাই চায় সেই দিনগুলো নানাভাবে উদযাপন করতে। আর এই উদযাপনের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে পোশাক। সামনেই যেহেতু বিজয় দিবস আনন্দের দিন, তাই আমরা পোশাকের মধ্যে সেই আনন্দভাবটা তুলে ধরতে পারি। লাল-সবুজ যেহেতু আমাদের জাতীয় পতাকার রং, তাই পোশাকে এই দুটি রঙের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে আনন্দের রং সৃষ্টি করা হয়েছে। এভাবেই স্বাধীনতার রঙে সেজেছে এ দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো।
মডেলঃ রোমানা আমিন, পোশাকঃ “র” কালেকশন্, মেকআপঃ প্রীটি লেডি বিউটি পার্লার, ছবিঃ সাজ্জাদ সাজু
Add Comment