হ্যালোডেস্ক
২৬ মার্চ ২০২২
আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। আজ বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরুর পর ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শত্রুসেনাদের বিতাড়িত করতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান। তিনি বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন..।’
বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে বীর বাঙালি মাতৃভূমিকে পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিকামী মানুষ। চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ। প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীনতার ঘোষণাটি পাঠ করেন অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপ-অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার নিভৃত আমবাগানে শপথ নেয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, তার অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গঠিত এই সরকারের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক কাঠামো লাভ করে। একটি সুশৃঙ্খল অত্যাধুনিক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিদের রুখে দাঁড়ানোর নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী প্রাণপণ যুদ্ধের সফল পরিণতিতে বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার আকাশে উড়েছে বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা। মরণপণ লড়াই এবং একসাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বিজয়। স্বাধীনতা তাই সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন।
স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের আজ গভীর শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছে জাতি। দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এবার স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী হলেও সুবর্ণজয়ন্তীর অংশ হিসেবে দিনটি পালিত হচ্ছে। করোনার কারণে গত দুই বছর স্থবির থাকায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ছিল না। একইসঙ্গে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ যথাযথভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। সেজন্য সরকার এই দুটি মাহেন্দ্রক্ষণ উদযাপনের মেয়াদ এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি মুজিববর্ষের আবহে এবারের জাতীয় দিবস পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তাছাড়া বর্তমানে মহামারি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
এর আগে স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের ডানায় একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ মিলেছে জাতিসংঘের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটি ছিল একটি বড় অর্জন। অনেক প্রাপ্তি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হচ্ছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা আজ সূর্যোদয়ের ক্ষণ ৫টা ৫৬ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাদল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বসাধারণের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
আজ সরকারি ছুটি। দিনটিতে সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও সব সড়ক ও সড়কদ্বীপ সাজানো হয়েছে জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায়। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে থাকছে আলোকসজ্জা। প্রত্যুষে রাজধানীতে তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার হচ্ছে।
Add Comment