সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-সালেহ্ রনক
পর্বঃ ০১
এক
বাহ্ তুমি তো ভারি মিষ্টি দেখতে !
কি নাম তোমার ?
আংকেলকে তোমার নাম বলো মা।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের তাগাদা পেয়ে মেয়ে উত্তর দিলো সিমরিন।
বাহ্ খুব সুন্দর নাম।
কোন ক্লাসে পড়ো?
ক্লাস টেন
কোন স্কুলে?
ধানমন্ডি আইডিয়ালে। এবার আর মেয়েকে উত্তর দিতে হয়নি, মা-ই দিয়ে দিয়েছে।পাশ থেকে উত্তর দিতে দেখে এবার দৃষ্টি চলে গেল ভদ্রমহিলার দিকে। বয়স ৫০ এর ধারেকাছে হবে। এখন যুগটা এমনি হুট করে কারো বয়স বলে দেয়া কখনো কখনো সম্ভব হয় না। এমন সব সাজের প্রচলন হয়েছে যে, বয়সের কোন প্রমানই রাখে না।
লিফট চলে আসাতে সবাই গিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আমার ফ্লাট ৪ তলায়, ভদ্রমহিলার তিনে। লিফটের বাটন প্রেস করা দেখে নিশ্চিত হলাম। এই বিল্ডিংয়ে উঠেছি মাস তিনেক হবে। এই প্রথম এই পরিবারের সাথে দেখা।
আপনি কি এখানেই থাকেন না বেড়াতে এসেছেন?
জ্বী আমি চার তলাতে থাকি। নতুন এসেছি।
ও তাই। সে কারণেই আপনার সাথে পরিচয় হয়নি।
আমি উত্তরে জ্বী বলে চুপ করে রইলাম।
লিফ্ট তিন তলায় থামতেই তারা নেমে গেল। যাবার সময় সিমরিনের মা ছোট্ট করে বললো, “আচ্ছা আসি। ”
উত্তরে আমি আবারও বললাম, জ্বী।
দুই
এই বাড়িটার ছাদটা অনেক বড়। দিনরাত সবসময় খোলা থাকে। তাই কখনো কখনো সময় পেলে রাতে ছাদে উঠি। কখনো বউ সাথে থাকে কখনো ইচ্ছে করে একাই আসি।যখন একা থাকি তখন ছাদের লাইট বন্ধ করে দিয়ে একটি আলো আঁধারের আবহ তৈরি করি। তারপর ছাদের উত্তর-দক্ষিণ কোণায় চুপ করে বসে আপন মনে সিগারেট টানি। অন্ধকারের মধ্যে সিগারেটের লাল আলো দেখতে বেশ লাগে। অন্ধকারে সিগারেটের ধোঁয়া মুহূর্তে মিলে যায়, ঠিকমতো দেখাও যায় না।
দরজা ঠেলে কে যেন ছাদে ঢুকেছে। শব্দ পেয়ে আমি গলা বাড়িয়ে দেখার চেষ্টা করি। হাতে ধরা সিগারেট, সুখটান দেয়ার অপেক্ষায়। দূর থেকে এক জোড়া নারী মূর্তিকে দেখে সিগারেটের বাকি অংশটুকু পায়ের নিচে ফেলে উঠে দাঁড়াই।
কি আশ্চার্য ছাদের লাইট বন্ধ কেন? সিমরিন লাইট জ্বালাও তো।
দূর থেকে নামটি শুনে বুঝতে আর বাকি নেই কারা ছাদে এসেছে। তাই এতোক্ষণ চুপ করে থাকলেও পূর্ব পরিচিতা হওয়ায় আমি নিজ থেকেই বলে উঠলাম, লাইট আসলে আমি বন্ধ করেছিলাম। দেখলাম ছাদে কেউ নেই, তাই নিরিবিলি একটু সময় কাটানোর জন্য আলো বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বলতে বলতে আমি আরও এগিয়ে গেলাম।
আরে আপনি! কেমন আছেন?
জ্বী ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
তেমন ভালো না।
কেন কি হয়েছে? অসুস্হ?
না। ঘর ভর্তি মেহমান। সারাদিন কিচেনেই থাকতে হয়েছে। এখন একটু মুক্তি মিলন।
হ্যাঁ মেহমান আসলে নিত্যদিনের ব্যস্ততার সাথে আরও নানা ব্যস্ততা যুক্ত হয়। আর তার পুরোটাই যায় গৃহকর্ত্রীর উপর দিয়ে,আমি উত্তর করলাম।
আমরা দুজন যখন সৌজন্যতা রক্ষায় কথা বলছিলাম, সিমরিন তখন ছাদের এমাথা থেকে ওমাথায় পায়চারি করছে। কখনো হাঁটছে কখনো ছোট্ট করে দৌড় দিচ্ছে। মেয়েটির এই চঞ্চলতা আমায় বেশ মুগ্ধ করছে।
আপনি একা কেন? ভাবীকে নিয়ে আসতেন।
মাঝে মাঝে দুজনে একসাথে আসি। আজ সে তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
আপনি কি প্রতিদিন রাতে ছাদে আসেন?
জ্বী না। কখনো কখনো।
ভাবী কি করেন?
এনজিওতে চাকুরি করেন।
আর আপনি?
আমি একজন ব্যবসায়ী ।
লক্ষ করলাম এই প্রায় মধ্যরাতেও ভদ্রমহিলা বেশ সাজ নিয়ে আছে। অনেক কুচি দিয়ে সুতির শাড়ি পরেছে। সবকিছুতে বেশ পরিপাটি ভাব। স্নিভলেজ ব্লাউজে এই বয়সেও দারুণ স্মার্ট। মেয়েটিও মায়ের মতো বেশ গুছানো। কালো প্যান্টের সাথে সাদা টিশার্টে দারুণ লাগছে কিশোরীকে। একপায়ে নুপুর পরে আছে। ফ্লাট স্লিপারেও বেশ লম্বা দেখতে মেয়েটি। সারাক্ষণ চুলগুলো নিয়েই যেন তার ব্যস্ততা। কখনো চুলগুলো মাথার উপর তুলে ক্লিপ দিয়ে আটকে চূড়ার মতো কিছু একটা বানাচ্ছে আবার কিছুক্ষণ পরেই পিঠের উপর চুল ছড়িয়ে দিয়ে কপালের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের ফাঁকে গুজে দিচ্ছে।
সেদিন আর কথা না বাড়িয়ে আমি ছাদ থেকে নিচে নেমে এলাম।
Add Comment