সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার
০৯ জুলাই ২০২১
-আশরাফ পিন্টু
১.
ফসলের ক্ষেতে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি দেখতে কিম্ভূতকিমাকার – ডিম্বাকৃতির মাথা, মুখ-মণ্ডল কালো কুচকুচে, চোখ দুটো যেন ইটের ভাটা। বন্দুক নিয়ে দু’হাত নিরিখ করে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি ক্ষেতের মদ্যিখানে। দেখে মনে হচ্ছে – ওর ত্রিসীমায় কেউ গেলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে মেরে ফেলবে।
পাখিরা ভয়ে অস্থির! কেউ ওই ফসলের ক্ষেতে যেতে সাহস পাচ্ছে না। ওদিকে সবার পেটেই প্রচণ্ড ক্ষুধা; ক্রমশ প্রবলতর হচ্ছে।
কবুতর তার ছেলেকে বাকুম বাকুম স্বরে ডেকে বলে, যাসনে খোকা, যাসনে! ওখানে গেলেই মৃত্যু।
মা কবুতরের কথায় অন্য পাখিরা পাখা ঝাঁপটিয়ে সায় দিচ্ছে।
শালিক শান্তস্বরে বলে, এ ক্ষেতে না গিয়ে অন্য ক্ষেতে যাই।
-সব ক্ষেতেরই তো একই অবস্থা। একজন বা দুজন করে বন্দুক হাতে পাহাড়ায় রয়েছে সবখানেই। শালিকের কথার জবাব দেয় ঘুঘু।
-তাহলে উপায়?
-উপোস ছাড়া তো কোনো পথ দেখছি না। চড়ুই বলে।
-উপোস থেকে কদিন বাঁচা যায়। দেখি কারো বাড়ি গিয়ে খাবার পাই কি না।
-সেটাই ভালো। মরার চেয়ে অল্প খেয়ে বেঁচে থাকা ভালো। শ্যামার কথায় সায় দিয়ে কবুতর বলে।
একমত আর সাহসের অভাবে পাখিগুলো সেদিন আর ফসলের ক্ষেতের দিকে এগুতে পারে না।
২.
অনেক দিন পর।
পাখিরা আবার ওই ক্ষেতের কাছে এসে জড়ো হয়েছে। সেদিন নেতৃত্ব দেবার কেউ ছিল না কিন্তু আজ পাখিদের নেতৃত্ব দিচ্ছে দাঁড়কাক। দাঁড়কাক দোয়েল, শ্যামা, চড়ুই, শালিক, চিল, বাজ, কুড়ল ছোট বড় সব জাতের পাখিদের একতাবদ্ধ করেছে।
দলনেতা কাক সবার উদ্দেশ্যে বলে, বন্ধুগণ, সবাইকে ডানায় ডানা মিলিয়ে এক সঙ্গে এগুতে হবে। কারো গায়ে গুলি লাগলেও পিছু পা হওয়া যাবে না। বুক থেকে ভয় দূর করে সাহস সঞ্চয় করতে হবে।
দলনেতা কাকের কথায় পাখিরা সমস্বরে কিচির মিচির করে সমর্থন জানায়।
কাকের নেতৃত্বে পাখিরা ফসলের ক্ষেতের দিকে এগুতে থাকে। ভয়ংকর লোকটির কাছাকাছি আসতেই চড়ুই হঠাৎ সামনের সারি থেকে ফুড়ুৎ করে পিছনে চলে যায়। ব্যাপারটি চিলের চোখে পড়তেই এক ঠোকরে চড়ুইকে সামনে পাঠায়।
দলনেতা কাক দলবল ছাড়াই একাকী লোকটির অনেক কাছে চলে এসেছে। কি ব্যাপার! লোকটি তো গুলি করছে না। এমন কি নড়াচড়াও করছে না। কাকের মনে কৌতুহল জন্ম নেয়। ও বুঝতে পারে এরমধ্যে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। ও উচ্চস্বরে কা-কা করে ডেকে উঠে দ্রুত উড়ে আসতে বলে সবাইকে।
দেখতে দেখতে পাখিরা লোকটিকে ঘিরে ফেলে। সকলে ওর মাথার ওপর চক্রাকারে উড়তে থাকে।
কিন্তু না, লোকটি কোনো গুলি করছে না; এমন কি মুখ দিয়ে কোনোরূপ শব্দও বের হচ্ছে না। এমন সময় দলনেতা কাক লোকটির বন্দুকের পর বসে পরে। সঙ্গে সঙ্গে চিল, বাজ, কুড়ল যেয়ে বন্দুকের পর বসে পড়ে। ওদের দেহের ভারে হঠাৎ বন্দুকটি পড়ে যায় মাটিতে।
এবার দলবদ্ধ পাখিরা উল্লাসে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, জয়! পাখিদের জয়!
এমন সময় সবাই তাকিয়ে দেখে দলনেতা দাঁড়কাক, চিল, বাজ লোকটিকে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। ওরা ওদের ধারালো ঠোঁট দিয়ে লোকটির হাত-পা টেনে ছিড়ে ফেলছে।
কিন্তু এ কি! লোকটির হাত-পা তো কোনো মানুষের নয়! বাঁশের গায়ে শুধু খড় আর কাপড় পেঁচানো।
সবশেষে ওরা বুঝতে পারে- লোকটি মানুষ ছিল না, ছিল কাকতাড়ুয়া। আর এই নিছক কাকতাড়ুয়াটিকে দেখে এতদিন কি ভয়ই না পেয়েছে ওরা!
Add Comment