হ্যালোডেস্ক
মাস্ক পরা উচিত কাদের? – বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে বেশ মতপার্থক্য থাকলেও করোনাভাইরাস ছড়ানো প্রতিরোধে মুখ ঢেকে রাখার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। মাস্ক পরার পক্ষে কথা বলা বিজ্ঞানীরা জানেন, সাধারণ মানুষ কেবল মাস্ক পরে করোনাভাইরাসকে পরাস্ত করতে পারবে না। কিন্তু তাদের যুক্তি, মাস্ক হতে পারে লকডাউন পরবর্তী সময়ে ভাইরাসটির বিপক্ষে লড়ার কার্যকর ও বাড়তি একটি অস্ত্র। আর শেষ পর্যন্ত এতে সায় দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুতে ডব্লিউএইচও মাস্ক পরার ওপর জোর দেয়নি। সংস্থাটি বলেছিল, কেবল দুই দল মানুষের মাস্ক পরা উচিত। যারা অসুস্থ বা যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আর যারা করোনাভাইরাস থাকতে পারে এমন কারও চিকিৎসা ও সেবা করছে। কিন্তু শুক্রবার তারা মাস্ক নিয়ে তাদের নির্দেশনা বদলেছে।
এখন ডব্লিউএইচও বলছে জনসমাগমের এলাকাতেও সবার মাস্ক পরে থাকা উচিত কারণ তা মুখ থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারে।
ডব্লিউএইচও সাধারণ মানুষদের পরতে বলছে কাপড়ের মাস্ক। মেডিকেল মাস্ক কেবল স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য সংরক্ষণ থাকা উচিত বলে তারা পরামর্শ দিচ্ছে।
তবে ষাটোর্ধ্ব ব্যাক্তি যাদের শারীরিক অবস্থা খারাপ তারা নিজেদের ভালোভাবে সুরক্ষার জন্য মেডিকেল গ্রেডের মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
কেন সাধারণ মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে সাধারণত পরামর্শ দেওয়া হয় না তার পেছনে যুক্তিও আছে। একজনের পরা মাস্কে অন্য কারও কাশি বা হাঁচিতে ভাইরাস চলে আসতে পারে। আবার মাস্ক মুখে পরা বা খোলার সময় অথবা পরে থাকা অবস্থায় স্পর্শ করলে ভাইরাস চলে আসতে পারে। মাস্ক নাক-মুখের ওপরই থাকে বলে তখন ভাইরাসও সহজে দেহে ঢুকে পড়তে পারে।
ভাইরাস ঠেকাতে মাস্ক পরতে হলে যে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয় তা সাধারণ মানুষের জানার কথা না। বরং সাধারণ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে সুরক্ষার একটা ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে থাকতে পারে।
ডব্লিউএইচও তাই বলেছিল, মাস্ক পরার চেয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বেশি কার্যকর।
গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তা টের পাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আক্রান্ত হলেও কখনোই উপসর্গ দেখা দেয়নি। এজন্যই বেড়ে গেছে মাস্কের গুরুত্ব।
কাশি, হাঁচি এমনকি কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জলকণায় ভর করে বাতাসে ছড়িয়ে পরে। এগুলো সরাসরি চোখ, নাক ও মুখের মাধ্যমে দেহে ঢুকতে পারে। আবার ভাইরাসগুলো কোনো পৃষ্ঠতলে পড়লে তা স্পর্শের মাধ্যমে পরোক্ষভাবেও শরীরে ঢুকতে পারে।
বাসায় তৈরি কাপড়ের মাস্কও কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়ানো রোধে কাজে আসে। মাস্ক হয়তো করোনাভাইরাসে উপসর্গবিহীন আক্রান্ত মানুষের কাছ থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর ঝুঁকি কমায়।
কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল প্রধান বিশেষজ্ঞ ড. মারিয়া ফন কেরকোভে বলেন, “আমরা সরকারগুলোকে সাধারণ জনগণকে মাস্ক পরতে উৎসাহ দিতে পরামর্শ দিচ্ছি।”
তবে সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস মনে করিয়ে দিয়েছেন, “কেবল মাস্ক আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে বাঁচাবে না।”
ডব্লিউএইচও -এর নতুন পরামর্শ আসার আগেই লকডাউন পরবর্তী সময়ে বিশ্বের অনেক দেশেই মাস্ক পরে থাকার নিয়ম চালু হয়েছে। যুক্তরাজ্যে আগামী ১৫ জুন থেকে গণপরিবহনে সবাইকে মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কিন্তু দেশটির চিকিৎসকরা বলছেন, এই নিয়মের আওতায় আনা হোক সব এলাকা যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব না।
ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) বলছে, মাস্ক শুধু গণপরিবহনের ক্ষেত্রে “সীমাবদ্ধ করা উচিত নয়”। আর নিয়মটি ১৫ জুন নয়, এখনই শুরু করা হলে করোনভাইরাস থেকে ঝুঁকি ‘অনেক কম’ হবে।
বিএমএ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডা. চন্দ নাগপল বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো গণপরিবহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে চালু করা উচিত সব অঞ্চলে যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সবসময় সম্ভব নয়। আর জুনের মাঝামাঝি নয়, জনসাধারণ এখনই এটার সঙ্গে মানিয়ে নিলে ঝুঁকি অনেক কম হবে।”
ডা. নাগপল মনে করেন, সরকারের উচিত জনসাধারণকে মুখের আচ্ছাদন সরবরাহ করার পাশাপাশি সেগুলি কীভাবে সঠিকভাবে পরিধান করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের মধ্যে সবসময় ভয় থাকে, সবাই মাস্ক পরা শুরু করলে মেডিকেল-গ্রেড মাস্কের সরবরাহে টান পড়ে কিনা।
আসলে যেভাবেই হোক মুখে আচ্ছাদন দিতে পারলেই হবে। তা ঘরে বানানো মাস্ক, স্কার্ফ অথবা ব্যানডানা দিয়েই হোক। মাস্ক তৈরি করা যেতে পারে সুতির কাপড়, পুরানো টি-শার্ট বা বিছানার চাদর দিয়ে। ঘরে মাস্ক তৈরির ওপর অনেক ধরনের পরামর্শ ও নির্দেশনা আছে অনলাইনে।
খেয়াল রাখতে হবে মাস্কে মুখ আর নাক ঢাকার পর যেন স্বচ্ছন্দে শ্বাস নেওয়া যায়।
মাস্ক পরার আগে বা খোলার পর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। মাস্কে হাত দেওয়া যাবে না।
ব্যবহৃত কাপড়ের মাস্ক সঙ্গে সঙ্গে ধোয়া সম্ভব না হলে তা একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে আলাদা রাখতে হবে।
বুঝতে হবে কেবল সাধারণ একটি মাস্ক বা বাসায় তৈরি করা মুখোশ আপনাকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে খুব কার্যকর হবে না কিন্তু আপনার কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়ানোর সম্ভাবনা কমিয়ে দেবে।
Add Comment