হ্যালোডেস্ক
শীতকালে শরীর সুস্থ রাখা বেশ কঠিন একটা কাজ। এ সময় প্রকৃতিগত পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা, ফ্লু, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি রোগবালাই যেন লেগেই থাকে সবসময়। শরীরের যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে শীত উপভোগ করার জন্য তাই কিছু শীতের খাবার রাখা চাই খাদ্যতালিকায়। শীতের হিম বাতাসের সঙ্গে খাদ্যতালিকায় আসে তাই বেশ কিছু পরিবর্তন। শীতের সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ঠান্ডা-কাশির মত রোগবালাই দূর করতে শীতের খাবার হিসেবে খাদ্যতালিকায় গমের তৈরি রুটি, ননীবিহীন দুধ, চর্বিহীন প্রোটিন ইত্যাদি রাখা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম, কম মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত রাখতে সহায়তা করে। কিছু শীতের খাবার রয়েছে, যেগুলো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দেখে নেওয়া যাক সেসব শীতের খাবার কি কি!
আপনাকে যে খাবারে রাখবে সতেজ
১. কমলা
শীতের খাবার হিসেবে কমলা ভালো একটি সাইট্রাস জাতীয় ফল। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শীতকালে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে শরীরকে রক্ষা করবে। আর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতেও সাহায্য করবে।
২. গাজর
শীতের খাবার হিসেবে গাজরও বেশ ভালো। গাজরের মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ বেটা ক্যারোটিন। গাজর বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমিয়ে ফুসফুসকে সুরক্ষা দেয়।
৩. ডিম
ডিমের মধ্যে রয়েছে নয়টি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও আয়রন। বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধে ডিম কার্যকর। ডিমে রয়েছে বিভিন্ন ভিটামিন, যেমন—বি২, বি১২, এ ও ই; রয়েছে জিংক, ফসফরাস এবং প্রয়োজনীয় মিনারেল। শীতের খাবার হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তাই ডিম রাখতে পারেন। শুধু শীত নয়, সারা বছরই ডিম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু ভাল মানের ডিম না খাওয়ার কারণে সেই উপকার থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত।
৪. আদা
শীতকালে আদার চা না হলে কি হয়? সকালে এক কাপ রঙ চা আদা সহ – এ যেন এক পরম পাওয়া! অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের ফ্লু প্রতিরোধে কাজ করে। প্রতিদিন সকালে শীতের খাবার হিসেবে তাই আদা রাখুন।
৫. কাঠবাদাম
কাঠবাদাম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি খাবার। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র্যাঅডিকেলের সঙ্গে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই শীতের খাবার হিসেবে এর কদর বেশ।
৬. মাশরুম
মাশরুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শীতে ঠান্ডা ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে মাশরুম খুব উপকারী। তাই শীতের খাবার হিসেবে আপনার খাদ্যতালিকায় অবশ্যই মাশরুম রাখুন!
৭. রসুন
জ্বর ও ঠান্ডার জাতীয় রোগব্যাধির জন্য রসুন খাওয়া ভালো। রসুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে কাঁচা রসুন সবচেয়ে ভালো কাজ করে। তবে হজমে সমস্যা হলে রসুন রান্না করেও খেতে পারেন। শীতের সময় তাই রসুন সেবন করুন।
৮.মধু
জ্বর ও ঠান্ডা প্রতিরোধে মধু সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। শীতের খাবার হিসেবে তো মধুর কোন জুড়িই নেই। মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। ঘুমানোর আগে বা সকালের নাশতার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। ভালো হয় এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলেও। মধু শুধু শীত কালে নয়, সারা বছরই আমাদের স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম। মধুর গুনাগুণ তাই বলে শেষ করা যাবে না। কুরআন এবং হাদীসেও মধুর অনেক উপকারিতার কথা বলা হয়েছে।
৯. সবুজ পাতার সবজি
শীতকাল মানেই হরেক রকম সবজির সমাহার। শীতের খাবার হিসেবে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় সবুজ পাতার সবজি রাখুন। এতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ ও ‘কে’ থাকে। এ ছাড়া হালকা হলুদ ও ফ্যাকাসে সবুজ পাতা বা শাকে প্রচুর ফলেট থাকে, যা গর্ভবতী মা এবং বাড়ন্ত শিশুদের জন্য অনেক ভালো। শীতের সবজিতে আরো রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা পলিস্যাকারাইড নামের শর্করা। সাধারণত হালকা সিদ্ধ সবজিতে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাওয়া যায়। তবে সবজি সিদ্ধ করে পানি ফেলে দেওয়া যাবে না। রান্নার সময় চেষ্টা করতে হবে যেন সবজির রং নষ্ট না হয়। এই সবুজ রঙের সবজির মধ্যে আছে পুঁইশাক, বাঁধাকপি, পাটশাক, পালংশাক ইত্যাদি।
১০. গ্রিন টি
গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। শীতের দিনে দুই থেকে তিন কাপ গ্রিন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। কিন্তু বাজারে যে গ্রিন টি পাওয়া যায় তা অনেক ক্ষেত্রেই ভেজালযুক্ত থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। এই জন্য খাঁটি গ্রিন টি সংগ্রহ করুন।
Add Comment