মতামত

সময় তাঁর নিয়মেই পরিবর্তন ঘটায়

করোনায় স্তব্ধ শহর

― মিলন মাহমুদ রবি

করোনার প্রকোপে চাপা পড়েছে সবকিছু। রোজকার ধর্মীয় দ্বন্দ্ব, অন্যায়ভাবে মুসলিম ধর্মাবলম্বী নির্যাতন, হিংসা মারামারি, ক্ষমতা দখলের লড়াই, এইসব ম্লান হয়েছে করোনা নামক মৃত্যুভয়ের কাছে। আর এই ‘ভয়’ যে কত কিছুকে জয় করতে পারে, সেটা বিশ্ব আজ পরতে পরতে অনুধাবন করতে পেরেছে। ধর্মীয় ভেদাভেদের উর্ধ্বে গিয়েও ভাবতে শিখিয়েছে।

সবাই আজ বাড়ির দরজা এঁটেছে। বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে সবাই, চারদেয়ালের মাঝে বন্দী থেকে একটু গভীরে নিজেকে খুঁজছে। বর্তমান সময়টা মিথ্যে নয়। তাই মহামারি করোনার অবসান চাইলেও, এই সময়টাকে ধরে রাখি। ধরে রাখি ‘ভয়’ নামক শব্দটিকে।

নিতে পারি যে শিক্ষা…

এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয় যে, জগতে যা কিছু ঘটে তার পেছনে একটা পারমার্থিক বা আধ্যাত্নিক কারণ রয়েছে। চলমান ভয়াভহ পরিস্থিতি সেটাই ইঙ্গিত করে!

করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং মুহূর্ত পাড় করতে হচ্ছে গোটা বিশ্ববাসীকে। আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা, খ্যাতি যার যা বিশেষণ আছে প্রকৃতগত ভাবে সবাই এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাস এই বোধটুকু আমাদের খুব ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব মোড়লদের দিকে তাকালে আর বুঝতে বাকি থাকে না।

নিজেকে আজ যারা গৃহে স্বল্প সময়ের বন্দিত্ব জীবনে আটকে ফেলেছেন, কেমন লাগছে? মনে হচ্ছে নিপীড়ন। তাই না? তাহলে যারা সারা জীবন ধরে এমন নিপীড়নের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যাচ্ছে তাদের কেমন কাটছে? এটাও ভাবতে শিখিয়েছে বর্তমান সময়।

জীবনের সময় খুব বড় না। সংক্ষিপ্ত। যেকোনো সময় জীবনের ইতি হয়ে যেতে পারে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে ভালো কিছু করাটাই জীবনের জন্য বড় কিছু করা। এই সময়ের মধ্যে বয়ষ্ক আর শিশুদের বেশী করে যত্ন নেয়াটাও একান্ত কর্তব্য। কারণ, এদের এক দল পৃথিবী দেখার জন্য আরেক দল পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন সমাজে সকলের প্রতি যত্নটাও বেড়ে চলছে যা চোখে পড়ার মতো।

যেমন, আমরা সময় থাকতেও পরিবারকে অবহেলা করে বা কাজের অজুহাতে বাড়ি ফিরিনি। দেইনি আপনজনদের মূল্যবান সময়টুকু। আজ ভাইরাস ফেরালো প্রিয়জনদের কাছে। সবার সাথে দেখা মিলছে খাবার টেবিলে। এ এক দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করে দিলো ক্ষুদ্র ভাইরাসটি।

সমস্ত দম্ভ নিমিষেই যে কোনো সময় চুপসে যেতে পারে। অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে। সেই ‘ভয়ে’ আজ অনেকেই দাঁড়িয়েছে ভেঙ্গে যাওয়া নিয়ম-কানুনের সমাজের পাশে। সমাজে সবাই আজ দায়িত্ববোধের হাত বাড়িয়েছে।

করোনা শিখিয়েছে সতর্কতা অবলম্বন করে চলতে! আমাদের শিখিয়েছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখতে। ক’দিন আগেও আমরা এতটা সচেতন ছিলাম না। যা কয়েকদিনে হয়েছি। এটাও পরিবর্তনের বড় একটা অংশ।

ঠিক একইভাবে আমাদের এই অরণ্যকে রক্ষা করতে হলে খুব বেশি প্রয়োজন অক্সিজেন। সেটাও শেষ হবার পথে ছিলো, স্তব্ধ পৃথিবীতে আজ যানচলাচল, বড় বড় কল-কারখানা সব বন্ধ হয়ে বসে আছে। মন ভরে আজ অক্সিজেন নিতে পারছি আমরা। এই অরণ্যকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতিকে নিজের গৃহ মনে করে চলতে হবে। কারণ, প্রকৃতি অসুস্থ হলে আমরা নিজেরাও সুস্থ থাকতে পারবো না।

কাজেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে বড় ক্ষতি না করে ফেলি। সময় এসেছে নিজেকে শুধরানোর। এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, পৃথিবীর শেষ এখানেই নয়! বরং নতুন এক পৃথিবী গড়ার সূচনায় শুরু হোক পথচলা। তাহলেই দিনশেষে নীল দিগন্তে হারানো সূর্যটাও দেখা যাবে যথানিয়মে।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930